এম. আর. মাহমুদ :: বাঁশ গরিবের গাছ হিসেবে খ্যাত। এক সময় বাঁশের ব্যবহার ছিল ব্যাপক মূল্যও ছিল কম। বাঁশ দিয়ে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের লোকজন বাড়ি নির্মাণ, ঘেরা-বেড়া তৈরি সহ নানা কাজে ব্যবহার করত। এমনকি মৃত ব্যক্তির মরদেহ বহনের খাঁটিয়া ও লাশ দাপনের কবরে মাটি দেওয়ার আগে বাঁশের তৈরী বেড়া এবং কুঠির শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে বাঁশ ব্যবহার হতো। বাঁশ দিয়ে তৈরি নৃত্য দিনের ব্যবহার কৃত সামগ্রী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লাই, ডুলা, মাছ ধরার চাঁই, ধান শুকানোর তলই, ধান ও লবণ রাখার ডোল, চালইন, কুলা সহ কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য হারাং, জুইর, মাথার থালা তৈরি সহ উপজাতীয় পল্লীতে নির্মিত টংঘর নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার হতো হর-হামেশা। সে কারণেই বলা হতো বাঁশ গরিবের গাছ। আরও একটি প্রবাদ আছে বাড়ির দক্ষিণে বাঁশ, উত্তরে হাঁস। একসময় চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও সিলেটের বনাঞ্চলে ব্যাপক বাঁশবন ছিল। বনবিভাগ বাঁশ মহাল নিলাম দিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সিংহ ভাগ বাঁশ দিয়ে তৈরি হতো কর্ণফুলী পেপার মিলে ভালো মানের কাগজ। কিন্তু ইদানিং নির্বিচারে বাঁশ উজাড় ও জুম চাষের কারণে বাঁশের বংশ বিস্তারে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অপর দিকে বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের কারণে বাঁশের প্রচলন কোন কোন ক্ষেত্রে কমেছে। দেশে অনেক প্রজাতের বাঁশ রয়েছে। তৎমধ্যে মুলি, নিতা, ডলু, বারিয়া, বরাক ও ছুটিয়া এসব বাঁশের মূল্য এখন আকাশ ছোঁয়া। প্রতি হাজার বাঁশের বাজার মূল্যমান ভেদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাহাড় থেকে বাঁশ আহরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিসহ বাঙালি পরিবারে হাজার হাজার সদস্য জীবিকা নির্বাহ করত। এক সময় মাতামুহুরী, বাঁকখালী সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও চেঙ্গি নদী হয়ে লাখে লাখে বাঁশের ভেলা ভেসে আসতে দেখা যেত। যে বাঁশ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা মেটাতো। কিন্তু এমন দৃশ্য এখন তেমন চোখেও পড়ে না। তবে বাঁশ এখনও বিলুপ্ত হয়নি। বাঁশের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গ্রাম-গঞ্জে ও পাহাড়িদের বাড়ি-ঘর নির্মাণে বাঁশের পরিবর্তে পাকা দালানও নির্মাণ হচ্ছে। তবে যাদের সঙ্গতি আছে রয়েছে। যাদের নেই তারা এখনও বাড়িঘর নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার করে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু পরিবারে বসতভিটায় বাঁশ-ঝাড় রয়েছে। দেশের ব্যাপক উন্নয়নের কর্মকান্ডের কারণে বাঁশের প্রচলন কমতে শুরু করলেও হালে উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করতেও দেখা যাচ্ছে। এমন কি এক সময় ছোট ছোট ছড়া-খালে বাঁশ দিয়ে সেতু তৈরি করে গ্রামের লোকজন পারাপার করতে। ক’দিন আগে রেলের একটি পুরনো ব্রীজ ভেঙ্গে দূর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অতীতে কোন দিন রেলের ব্রীজে বাঁশ ব্যবহারের কথা শোনা না গেলেও রেল দূর্ঘটনার পর রেলের পুরনো ব্রিজে বাঁশ ব্যবহারের চিত্রটি ভেসে উঠেছে। কি চমৎকার আমরা উন্নয়নে মহাসড়কে যাতায়ত করলেও রেলের ব্রিজে বাঁশ ব্যবহারের কথা আগে কোন দিন জাতি না শুনলেও এবার তা শুনেছে। রেলের পুরনো ব্রিজে বাঁশ দিয়ে রক্ষার ব্যর্থ প্রচেষ্টার চাইতে প্রতিজন রেল যাত্রীদের পিছনে বাঁশ দিলে প্রাণহানীর মত দূর্ঘটনা ঘটত না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেদিন একটি চিত্র থেকে আমি হতবাক ‘বি আর টিসি’ একটি বাসের সামনের আয়না ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে বাঁশের কাঞ্চি দিয়ে পলিথিনের আয়না তৈরি করে বাসটি চালাতে দেখা গেছে। এ যেন আজব দেশ ক’দিন পর হয়তো শুনব ভাতের মাড় দিয়ে (ভাতের ফেন) দই তৈরিও সম্ভব হবে। দেশে এভাবে বাঁশের কদর বেড়ে যাবে তা হয়তো জাতি আগে চিন্তা করেনি। এখন যখন বাঁশের বহুমূখী ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাঁশের আবাদও বাড়ানো দরকার। প্রতি বছর বর্র্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে বিশেষ করে জুন-জুলাই মাসে সরকারী ভাবে বৃক্ষরোপনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বাঁশ রোপনের পরিকল্পনা কেউই গ্রহণ করছে না। এক সময় দেশে বাঁশের আকাল হলে বাঁশের বহুমূখী ব্যবহারে সংকট সৃষ্টি হবে। তাই এখনই বাঁশের আবাদ বাড়ানো জরুরী হয়ে পড়েছে। বাঁশ শুধু এসব কাজে ব্যবহার হচ্ছে না প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও এক শ্রেণির মানুষ বাঁশ ব্যবহার করে থাকে। মূলত বাঁশ সমাচার বইটি লিখেছিলেন সাম্যবাদী দলের নেতা প্রয়াত নেতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন। তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বইটি লিখে সাড়া জাগিয়েছিলেন। আমি স্কুল জীবনে বইটি পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি বইটিতে সে সময়ের দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ব্যঙ্গ করে শাসক গোষ্ঠীকে প্রতিটি পণ্যের পিছনে এক একটি করে বাঁশ দিয়ে একশত বাঁশ পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে রেলের ব্রিজে দালান-কোটা ও সিসি ঢালায় এর কাজে বাঁশের ব্যবহার দেখে বাঁশ সমাচার লেখাটি লেখার খায়েস জেগেছে। বাঁশ ছোট তবে প্রতিনিয়ত গ্রাম-গঞ্জে বসতবাড়ি, ক্ষেত-খামার সহ কুঠির শিল্পে বাঁশ ব্যবহারে চাহিদা বাড়লেও দালান-কোটা ও ব্রিজ, কালভার্ট ও সিসি ঢালায় কাজে বাঁশের ব্যবহার দেখে আম-জনতা বলতে শোনা গেছে শুধু বৃক্ষরোপন করে পরিবেশ রক্ষা ও দেশের চাহিদা মেটালে চলবে না, সাথে বাঁশ রোপনের কর্মসূচী হাতে নেওয়া জরুরী বলে মনে করছে।
প্রকাশ:
২০১৯-০৬-২৭ ১৩:৪৯:৫৮
আপডেট:২০১৯-০৬-২৭ ১৩:৪৯:৫৮
- জমজম হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তারের বক্তব্য
- চকরিয়ায় রেল স্টেশন মাস্টারকে ছুরিকাঘাত করেছে দুবৃর্ত্তরা
- চকরিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দুই দোকান পুড়ে ছাই,
- চকরিয়ায় মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার গাড়ি চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের ক্যাম্পেইন
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- নাইক্ষ্যংছড়িতে হতদরিদ্রদের মাঝে বিজিবির শীতবস্ত্র বিতরণ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- কক্সবাজার প্রেসক্লাবকে বৈষম্য মুক্ত করতেই হবে
- চকরিয়ায় মাটির টপ সয়েল কেটে বিক্রি : অভিযানে স্কেভেটর ও তিনটি ডাম্পার গাড়ি জব্দ
- চকরিয়ার বদরখালীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
- ফুলছড়িতে ৪৬ টুকরো গর্জন কাঠ ভর্তিগাড়ী জব্দ আটক-১
- চকরিয়ায় আ. লীগ নেতার গোয়ালঘর থেকে চোরাই গরু উদ্ধার
- রামুতে বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলী গৌতম চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- চকরিয়ায় সংঘবদ্ধ কিশোরী ধর্ষণকাণ্ডে ৭ জন গ্রেফতার, ৩ জন জেলহাজতে
- চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে হাতি শাবকের ঠাঁই হলো
- ঈদগাঁওতে অনলাইন প্রেস ক্লাবের অভিষেক ও প্রীতিভোজ অনুষ্টান
- চকরিয়ায় রাতের আধারে গরীব মানুষের ঘরের দরজায় গিয়ে শীতের কম্বল দিয়েছেন ইউএনও
- চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে বার্ষিক পুনর্মিলনী ও অভিষেক
- চকরিয়ায় মাটির টপ সয়েল কেটে বিক্রি : অভিযানে স্কেভেটর ও তিনটি ডাম্পার গাড়ি জব্দ
- সঙ্গী হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত চকরিয়ায়
- ফুলছড়িতে ৪৬ টুকরো গর্জন কাঠ ভর্তিগাড়ী জব্দ আটক-১
- চকরিয়ায় পুলিশের জালে দুই ডাকাত, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
পাঠকের মতামত: